সূরা আল-ফাতিহা হলো পবিত্র কুরআন মাজীদের প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের একেবারেই প্রথম যুগের সূরা "সূরা আল-ফাতিহা"। হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা।
ফাতিহা শব্দটি আরবি "ফাতহুন" শব্দজাত যার অর্থ "উন্মুক্তকরণ"। এ সূরার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এর এই নামকরণ করা হয়েছে। যার সাহায্যে কোন বিষয়, গ্রন্থ বা জিনিসের উদ্বোধন করা হয় তাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অন্য কথায় বলা যায়, এ শব্দটি ভূমিকা এবং বক্তব্য শুরু করার অর্থ প্রকাশ করে।
ইমাম কুরতুবী বলেন, একে ‘ফাতিহাহ’ এজন্য বলা হয় যে, এই সূরার মাধ্যমে কুরআন পাঠ শুরু করা হয়। এই সূরার মাধ্যমে কুরআনের সংকলন কাজ শুরু হয়েছে এবং এই সূরার মাধ্যমে ছালাত শুরু করা হয়’। এটি মক্কায় অবতীর্ণ ১ম ও পূর্ণাঙ্গ সূরা। এতে ৭টি আয়াত, ২৫টি শব্দ এবং ১১৩টি হরফ বা বর্ণ রয়েছে। সূরাটি কুরআনের মূল, কুরআনের ভূমিকা ও ছালাতের প্রতি রাক‘আতে পঠিতব্য সাতটি আয়াতের সমষ্টি ‘আস-সাব‘উল মাছানী’ নামে ছহীহ হাদীছে ও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহপাক এরশাদ করেন, وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعاً مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْآنَ الْعَظِيْمَ ‘আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।’ (হিজর ১৫/৮৭)
সূরা আল ফাতিহা আরবিতে:
১. بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
২. الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
৩. الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
৪. مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
৫. إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
৬. اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
৭. صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
সূরা আল ফাতিহা'র বাংলা উচ্চারণ:
১. বিসমিল্লাহির রাহমা-নির রাহি-ম।
২. আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’-লামি-ন।
৩. আররাহমা-নির রাহি-ম।
৪. মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।
৫. ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন
৬. ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম
৭. সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ—ল্লি-ন।
সূরা আল ফাতিহা'র বাংলা অর্থ:
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগত সমূহের প্রতিপালক।
২. যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়।
৩. যিনি বিচার দিবসের মালিক।
৪. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
৫. তুমি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর।
৬. এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে তুমি পুরস্কৃত করেছ।
৭. তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে।
(আমীন! তুমি কবুল কর!)
সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য:
১) সূরা ফাতিহা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কুরআন কোনো কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নেই। (বুখারি, মিশকাত : ২১৪২)
২) সূরা আল ফাতিহা এবং সূরায়ে বাকারা’র শেষ তিনটি আয়াত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)
৩) যে ব্যক্তি নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথাটি তিনবার বললেন। (মিশকাত : ৮২৩)
৪) আবু সা‘ঈদ খুদরী রা. বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (বুখারি শরীফ : ৫৪০৫)
সুরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরায়ে ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরায়ে ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী : ১৪৮)
সূরা ফাতিহার ফজিলত:
সুরা ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এর ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:-
১) আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোন বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুন বর্ণনা করেছে।
বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়।
বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস